জনপ্রিয় অভিনেতা মুকুল দেব আর নেই। ৫৪ বছর বয়সে, ২৩ মে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি অসুস্থতায় ভুগছিলেন এবং হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, তিনি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।হিন্দি ও পাঞ্জাবি সিনেমার পাশাপাশি একাধিক টেলিভিশন শোতেও অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করেছিলেন মুকুল দেব। মাত্র ৫৪ বছর বয়সে তার চলে যাওয়া যেন শিল্পী ও সহকর্মীদের হৃদয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। অভিনেত্রী মুগ্ধা গডসে জানান, “তিনি এক সপ্তাহ ধরে অসুস্থ ছিলেন এবং আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। আমরা কেউই এমন পরিণতির জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।” মুকুলের বড় ভাই, অভিনেতা রাহুল দেব, সামাজিক মাধ্যমে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে মুকুলের প্রয়াণের খবর জানান। ইনস্টাগ্রামে প্রকাশিত বার্তায় বলা হয়, “আমাদের ভাই মুকুল দেব গতরাতে নয়াদিল্লিতে শান্তিপূর্ণভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি তার কন্যা সিয়া দেব এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের রেখে গেছেন, যাদের হৃদয়ে তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন।” বলিউডে ‘দস্তক’ ছবির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেছিলেন মুকুল, যেখানে তিনি সুস্মিতা সেনের বিপরীতে অভিনয় করেন। মহেশ ভাট পরিচালিত ওই ছবির মাধ্যমে তিনি দর্শকমনে প্রথম ছাপ ফেলেন এবং পরে একাধিক চলচ্চিত্র ও টিভি শোতে তার প্রতিভার ছাপ রেখে যান। একজন সদা হাস্যোজ্জ্বল, হৃদয়বান এবং পরিশ্রমী অভিনেতা হিসেবে স্মরণ করছেন সকলে।
অভিনেত্রী দীপশিখা নাগপাল স্মৃতিচারণ করে বলেন, “মুকুল একজন প্রাণবন্ত মানুষ ছিলেন। আমরা একই টিমে কাজ করেছি, এবং মুম্বাই এলে দেখা করত। এমনকি আমার গানের লঞ্চেও এসেছিলেন। বিশ্বাস করতে পারছি না, তিনি আর নেই।”তিনি আরও জানান, “মুকুল পাঞ্জাবি সিনেমাতেও নিয়মিত কাজ করতেন। শুনেছি, তিনি সেখানেই তার মা ও মেয়ের সঙ্গে থাকতেন। আমাদের একটা মজার বন্ধুত্বের দল ছিল, একসঙ্গে অনেক ভালো সময় কেটেছে।” বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীদের চোখে তিনি ছিলেন একজন সদালাপী, সহযোগিতাপূর্ণ এবং মেধাবী শিল্পী। তার প্রয়াণে এক শূন্যতা তৈরি হলো, যা সহজে পূরণ হবার নয়।
অভিনেতা মনোজ বাজপেয়ী সামাজিক মাধ্যমে একটি আবেগপূর্ণ বার্তায় মুকুল দেবকে শ্রদ্ধা জানান। তিনি লেখেন, “মুকুল শুধুমাত্র একজন শিল্পী নন, ছিলেন একজন প্রকৃত বন্ধু। তার উষ্ণতা, আবেগ এবং আন্তরিকতা মনে গেঁথে থাকবে আজীবন। এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে ভাবতেই পারছি না। তার পরিবারের প্রতি আমার প্রার্থনা ও সমবেদনা রইল।”
অন্যদিকে, অভিনেতা বিন্দু দারা সিং এক সাক্ষাৎকারে জানান, “বাবা-মার মৃত্যুর পর থেকেই মুকুল অনেকটা নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। তিনি তার মায়ের সঙ্গে খুব গভীরভাবে জড়িয়ে ছিলেন। খুব একটা বাইরে আসতেন না, সবার সাথে মেলামেশাও কমে গিয়েছিল। “শেষদিকে শরীর খারাপ হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তার ভাই ও ঘনিষ্ঠদের জন্য এই সময়টা কঠিন—আমার সমবেদনা রইল।” মুকুল দেবের অভিনয় যাত্রা ছোট পর্দা ও বড় পর্দা—দুই জায়গাতেই ছিল প্রশংসিত। ‘ঘরওয়ালি উপরওয়ালি’, ‘কাশিশ’, ‘কুমকুম – এক পেয়ারা সা বন্ধন’-এর মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন তিনি। পাশাপাশি ‘দস্তক’, ‘জল’, ‘আর… রাজকুমার’, ‘সন অফ সর্দার’, ও ‘হিম্মতওয়ালা’-এর মতো সিনেমাতেও তাঁর উপস্থিতি দর্শকদের মনে রেখাপাত করেছে। সন অফ সর্দার ২’-এ শেষ কাজের স্মৃতি। বিন্দু আরও জানান, সদ্য সমাপ্ত ছবি ‘সন অফ সর্দার ২’-এ মুকুল দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়েছেন। “তার কিছু সংলাপ এতই হাস্যকর ছিল, দর্শকরা সিনেমা হলে হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়বে,” মন্তব্য করেন তিনি। ছবিটি মুক্তির অপেক্ষায় থাকলেও মুকুল তা দেখে যেতে পারলেন না—এটাই সবচেয়ে বেদনাদায়ক বলে উল্লেখ করেন তিনি। বিন্দুর কথায় উঠে আসে, মায়ের মৃত্যুর পর মুকুলের শারীরিক অবস্থাও অবনতির দিকে যাচ্ছিল। ওজন বেড়ে গিয়েছিল, মানসিক অবসাদ গ্রাস করছিল। কিন্তু সহকর্মীরা—বিশেষ করে অজয় দেবগন—তাকে স্বাস্থ্য সচেতন করে তোলার চেষ্টা করেন। “আমরা সবাই ওকে ব্যায়াম করতে বলেছিলাম। ধীরে ধীরে ও আবার নিজের যত্ন নিতে শুরু করেছিল,”। তার প্রয়াণে চলচ্চিত্র জগৎ হারালো এক প্রতিভাবান অভিনেতাকে—এমন এক শিল্পী, যিনি সংলাপের থেকেও বেশি কথা বলতেন তার অভিব্যক্তি আর আত্মিক উপস্থিতির মাধ্যমে।
অভিনেত্রী দিব্যা দত্ত বলেন, “জীবন কতটা অনিশ্চিত, তা মুকুলের চলে যাওয়াই প্রমাণ করে। এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে তিনি আর নেই। তিনি শুধু একজন ভালো সহকর্মী ছিলেন না, ছিলেন একজন হৃদয়বান বন্ধু। তার মতো নম্র ও ভালো মানুষ খুব কমই দেখা যায়।”
প্রবীণ অভিনেতা পুনিত ইসার, যিনি মুকুলের সঙ্গে “যমলা পাগলা দিওয়ানা” ছবিতে কাজ করেছিলেন, বলেন, “তার মতো ফিট এবং প্রাণবন্ত একজন মানুষ এমনভাবে চলে যেতে পারে—এটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।”শিল্পীজগতে মুকুল দেব ছিলেন এমন একজন, যিনি পর্দার বাইরেও সহানুভূতিশীল, বন্ধুবৎসল এবং সদা হাস্যোজ্জ্বল মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার শূন্যতা দীর্ঘদিন অনুভব করবেন তার প্রিয়জনেরা।
হানসাল মেহতা ও রাহুল ভাট-সহ বহু বিশিষ্ট তারকা সোশ্যাল মিডিয়ায় মুকুলের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তারা একত্রে স্মরণ করেছেন সেই উজ্জ্বল প্রতিভাবান অভিনেতাকে, যিনি শুধুমাত্র পর্দায় নয়, বাস্তব জীবনেও ছিলেন প্রাণবন্ত ও মানবিক। মুকুল দেবের হঠাৎ চলে যাওয়া যেন এক অপূরণীয় ক্ষতি—একজন শিল্পীর নয়, এক অনন্য মানুষের। চলচ্চিত্রজগৎ তাকে মনে রাখবে তার কাজ, হাসি এবং হৃদয়ের জন্য।