ভ্যাটিকানে শেষ বিদায় ‘গরিবের পোপ’ ফ্রান্সিসকে — বিশ্ব নেতাদের উপস্থিতিতে চোখে জল লাখো মানুষের,

ভ্যাটিকান সিটি, শনিবার: ইতিহাসের পাতায় এক অধ্যায়ের অবসান। ‘গরিবের পোপ’ নামে পরিচিত পোপ ফ্রান্সিসকে শেষ বিদায় জানাতে ভ্যাটিকানে এক আবেগঘন মুহূর্তের সাক্ষী থাকল বিশ্ব। গত কয়েক দিন নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন ৮৮ বছর বয়সি এই ধর্মগুরু। সোমবার সকালে স্থানীয় সময় ৭টা ৩৫ মিনিটে ভ্যাটিকানের কাসা সান্তা মার্তায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। শনিবার সেন্ট পিটার্স স্কোয়্যারে জড়ো হন লাখো মানুষ—শুধু খ্রিস্টান ভক্তই নয়, সব ধর্মের, সব বর্ণের মানুষেরা যেন একত্র হয়েছিলেন এক মানবিক নেতৃত্বকে সম্মান জানাতে। উপস্থিত ছিলেন বিশ্বের প্রথম সারির নেতারা—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদামির জেলেনস্কি-সহ আরও অনেকে।সূর্যের উজ্জ্বল আলো যেন প্রার্থনার পটভূমি হয়ে উঠেছিল। কেউ বললেন, “এই আলো যেন ঈশ্বর নিজে বিদায় জানাতে এসেছেন তাঁর প্রিয় সন্তকে।”দুপুর দেড়টা নাগাদ শুরু হয় শেষকৃত্যানুষ্ঠান। ধর্মীয় অনুষঙ্গ, প্রার্থনা এবং স্মৃতিচারণার মধ্যে দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় ক্যাথলিক চার্চের এই প্রভাবশালী নেতাকে। জনতার ঢল সামলাতে ভ্যাটিকান ও ইতালি সরকার কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছিল। চারপাশে ছিল সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনী, নজরদারির প্রযুক্তি ও জরুরি পরিষেবার প্রস্তুতি।এই আয়োজনের মাধ্যমে শুরু হল পোপ ফ্রান্সিসকে ঘিরে ন’দিনব্যাপী আনুষ্ঠানিক শোকপর্ব—যা ভ্যাটিকানের দীর্ঘ ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায় হয়ে থাকবে।২০১৩ সালে পোপ ফ্রান্সিস দায়িত্ব নেন প্রথম লাতিন আমেরিকান হিসেবে। তার পর থেকে চার্চ হয়ে উঠেছিল আরও মানবিক, আরও কাছের। প্রান্তিকদের পাশে দাঁড়ানোই ছিল তাঁর নীতি। সেই কারণেই মানুষ তাঁকে ‘গরিবের বন্ধু’ বলতেন।শেষকৃত্যে প্রধান প্রার্থনায় নেতৃত্ব দেন কার্ডিনাল জিওভান্নি বাতিস্তা রে। তিনি বলেন, “পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন সাধারণ মানুষের আশ্রয়। সবার জন্য ছিলেন সমান খোলা মন।”শেষযাত্রায় লক্ষ মানুষের ঢল নেমেছিল রোমের রাস্তায়। বিশাল স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছিল প্রার্থনার দৃশ্য। পোপের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, তাঁকে সমাধিস্থ করা হয় সেন্ট মেরি মেজর ব্যাসিলিকার পাশে এক সাধারণ কবরস্থানে, যেখানে লেখা রয়েছে একটি মাত্র শব্দ—‘Franciscus’।শেষ চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, “মা মেরির সেবায় আমি আমার জীবন উৎসর্গ করেছি। তাই মৃত্যুর পরও তাঁর কাছেই থাকতে চাই।”এই ইচ্ছার প্রতিফলন ছিল তাঁর কফিনেও। ঐতিহ্যবাহী সাইপ্রেস, সীসা ও ওক কাঠের ত্রিস্তর কফিনের বদলে তাঁর মরদেহ রাখা হয় একটি সাধারণ কাঠের কফিনে—সাদা, অলঙ্করণহীন। এই দিন আরেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী থেকেছে ভ্যাটিকান। ফেব্রুয়ারিতে দ্বন্দ্বের পর প্রথমবার মুখোমুখি হন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও জেলেনস্কি। তাঁদের বৈঠক নিয়ে জেলেনস্কি এক্সে লেখেন, “গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। যুদ্ধবিরতি ও ভবিষ্যতের শান্তি নিয়ে কথোপকথন ইতিবাচক।”এই বিদায় শুধু এক ধর্মনেতার নয়, এক মানবিক আদর্শেরও—যার প্রভাব থেকে যাবে বিশ্ববাসীর হৃদয়ে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More posts