বিয়ে না মানায় শাস্তি শিকল! চাকরির জন্য লড়া মেয়েকে বন্দি রাখার অভিযোগ, অভিযুক্ত বাবা-মা
উত্তর হাওড়ার ঘুসুড়ি এলাকায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘিরে তোলপাড় স্থানীয় মহল। মাত্র ১৯ বছরের তরুণী আরতি সাউ, যিনি কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি একটি চাকরিতেও যুক্ত ছিলেন, স্বপ্ন দেখতেন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। তবে সেই স্বপ্নকেই যেন বন্দি করে রাখা হয়েছিল চার দেওয়ালের ভিতরে।আরতির অভিযোগ, নিজের সিদ্ধান্তে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণেই তাঁর বাবা-মা তাঁকে ঘরে আটকে রাখেন। শুধু তাই নয়, পায়ে শিকল বেঁধে তাকে ঘরবন্দি করে রাখা হয়—অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং আত্মসম্মানের লড়াই যেন হয়ে ওঠে এক কারাগার।স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি জানাজানি হতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। দীর্ঘ আলোচনার পর অবশেষে উদ্ধার করা হয় কলেজপড়ুয়া সেই তরুণীকে। বর্তমানে পুলিশ পুরো ঘটনার তদন্তে নেমেছে।আরতির কণ্ঠে শোনা গেছে—”আমি শুধু স্বাধীনভাবে নিজের জীবনটা গড়তে চাই। স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সে স্বপ্নই আজ দোষ হয়ে দাঁড়াল!”
১৯ বছরের আরতি (পরিবর্তিত নাম), সাবিত্রী মহাবিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। পড়াশোনার পাশাপাশি জীবনের ভার নিজের কাঁধে তুলে নিতে চেয়েছিলেন তিনি। নিউ ব্যারাকপুরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজও জুটিয়ে ফেলেছিলেন নিজের চেষ্টায়। শুরু হয়েছিল সেলস ট্রেনিং—যার জন্য প্রতিদিন যাতায়াতে অসুবিধা হওয়ায় সাময়িকভাবে থাকার বন্দোবস্তও করেছিলেন সেখানে।কিন্তু ট্রেনিং শেষ করে বাড়ি ফিরতেই নেমে এল ঝড়। তরুণীর অভিযোগ, বাবা-মা চাইলেন তিনি চাকরি ছেড়ে দিন এবং তাড়াতাড়ি বিয়ে মেনে নেন। এই চাপের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই শুরু হল মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন।আরতির কথায়—”আমি শুধু চাকরি করতে চেয়েছিলাম, তাই বলেই আমাকে মারধর করা হত। একবার বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম, কিন্তু ফিরেই আরও বড় ভুল করলাম।”বাড়ি ফেরার পর একঘরে করে দেওয়া হয় তাঁকে। এমনকি ঘর থেকে বেরোতে না পারেন, তাই পায়ে শিকল পরিয়ে রাখা হয়!এই খবরে নড়ে চড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। শুক্রবার, মালিপাচঘরা থানার পুলিশ এসে শিকল বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে তাঁকে। পরে থানায় ডেকে পাঠানো হয় আরতির বাবা-মাকেও।এই ঘটনাটি আমাদের সামনে আবারও এক বড় প্রশ্ন তুলে ধরে—নারী স্বাধীনতা কেবল শব্দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ? নিজের সিদ্ধান্তে বাঁচতে চাওয়া কি এতটাই অপরাধ?
Post Comment