পিএনবি কেলেঙ্কারির অভিযুক্ত মেহুল চোকসি বেলজিয়ামে গ্রেপ্তার
অবশেষে পিএনবি কেলেঙ্কারির মূল অভিযুক্ত মেহুল চোকসি ধরা পড়েছেন বেলজিয়ামে। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর, বেলজিয়াম পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। সূত্রের খবর অনুযায়ী, ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই-এর অনুরোধেই এই পদক্ষেপ নেয় বেলজিয়াম কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, আপাতত চোকসিকে স্থানীয় একটি জেলে রাখা হয়েছে এবং তাঁর প্রত্যার্পণের প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই গ্রেপ্তারি পিএনবি দুর্নীতি মামলায় তদন্তে এক বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সূত্রের খবর, জেল হেফাজত থেকে মুক্তি পেতে শিগগিরই আবেদন জানাতে পারেন মেহুল চোকসি। শোনা যাচ্ছে, নিজের শারীরিক অবস্থার অবনতিকে সামনে রেখে তিনি জামিনের আর্জি জানাতে পারেন। এমনটা হলে, আদালত থেকে সাময়িক ছাড়ও পেয়ে যেতে পারেন তিনি। তবে, ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা চাইছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেহুল চোকসিকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের আওতায় আনা হোক। তদন্তকারীদের মতে, পিএনবি কেলেঙ্কারির মূল তথ্য ও যোগসূত্র এখনও তাঁর কাছ থেকেই পাওয়া সম্ভব।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক থেকে প্রায় ১৩,৮৫০ কোটি টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে মেহুল চোকসির বিরুদ্ধে। অভিযোগ সামনে আসতেই দেশ ছাড়েন এই হিরে ব্যবসায়ী। এরপর দীর্ঘদিন তিনি ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের অ্যান্টিগা ও বারবুডায় আত্মগোপন করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর অবস্থান চিহ্নিত করা সম্ভব হয় বেলজিয়ামে। সেই খবর পেয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা বেলজিয়াম প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং চোকসিকে আটক করার জন্য অনুরোধ জানায়। বেলজিয়াম কর্তৃপক্ষ ভারতের অনুরোধে সাড়া দিয়েই তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
এই খবর সামনে আসতেই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বেঙ্গালুরুর এক উদ্যোগপতি, হরিপ্রসাদ এসভি। প্রায় নয় বছর আগে তিনিই প্রথমবার জনসমক্ষে মেহুল চোকসীর আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। পিএনবি-র বিপুল অর্থ তছরুপের বিষয়টি হরিপ্রসাদ বিভিন্ন স্তরের কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন, এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দফতরেও বিষয়টি চিঠি লিখে জানান। তাঁর এই পদক্ষেপই চোকসীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হওয়ার পথ প্রশস্ত করে, যার জেরে ২০১৮ সালে দেশ ছেড়ে পালান চোকসি। অবশেষে তাঁর গ্রেপ্তারিতে এক দীর্ঘ সংগ্রামের ফল মিলেছে বলে মনে করছেন হরিপ্রসাদ।
সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় হরিপ্রসাদ এসভি বলেছেন, এই গ্রেপ্তারি শুধু ভারতের জন্য নয়, বরং চোকসীর প্রতারণায় ক্ষতিগ্রস্ত সকলের জন্যই একটি বড় জয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “ওঁকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভারতে ফিরিয়ে এনে আদালতের মুখোমুখি করানো উচিত।” পাশাপাশি চোকসীর বিরুদ্ধে আর্থিক ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়টিও তুলে ধরেন হরিপ্রসাদ। তাঁর মতে, “শুধু গ্রেপ্তার করলেই চলবে না, চোকসী দেশ থেকে যে বিপুল পরিমাণ টাকা সরিয়ে ফেলেছেন, তা বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকুক, তা খুঁজে বের করে ফেরত আনতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, ভারত সরকার এই কাজে সফল হবে।”
1 comment